যে ৫ কপিরাইটিং ফর্মুলায় সেল আসবেই: উদাহরণসহ জেনে নিন
ফেসবুক হোক বা ওয়েবসাইট যেখানেই সেল করতে চান না কেনো আমার আজকের এই গাইডলাইন আপনার কাজে লাগবেই লাগবে। কারণ আপনার কাস্টমারেরা মানুষ। পাথর নয়। সুতরাং তাদের ক্যাচ করতে হবে ইমোশন, লজিক আর ইন্টারেস্টিং ট্রিকস দিয়ে। কিন্তু কিভাবে? জানতে হলে পড়ে নিতে হবে ৫ কপিরাইটিং ফর্মুলা। যার মাধ্যমেই আনা যাবে হিউজ সেলস, জেনারেট করা যাবে ডাবল ইন্টারেস্ট।
AIDA ফর্মুলা
কপিরাইটিং ফর্মুলায় সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং কাজের ফর্মুলা হলো এই AIDA ফর্মুলা। যাকে কিনা বলা হয়ে থাকে সেলের ম্যাজিসিয়ান। এই ফর্মুলাটি কাজ করে ঠিক এভাবে:
Attention → Interest → Desire → Action
একেবারে উদাহরণের সাহায্যে যদি এই ফর্মুলা বোঝাই তাহলে বিষয়টা হবে এমন, ধরুন আপনার কাস্টমার ফেসবুকে স্ক্রল করছে। হঠাৎ এক পোস্ট তার চোখে পড়লো। দেখলো:
আপনি কি জানেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন ৩ হাজার মানুষ পিঠে ব্যথা নিয়ে ঘুম থেকে উঠে? আর এই লাইনটা হচ্ছে Attention। এরপর হয়তো পোস্টে লেখা ছিলো, জানলে অবাক হবেন একটি সাধারন Back Pillow দিয়ে কিন্তু এই ব্যথা কমিয়ে ফেলা সম্ভব মাত্র ৭ দিনে! আর কপির এই পার্টটা হবে Interest তৈরি। এরপর হয়তো পোস্টদাতা Desire জাগাতে বললেন, আমরা ফ্রি হোম ডেলিভারি দিচ্ছি, শুধু আজকের জন্য। ব্যাস! তাতেই আপনার মন অর্ডার দেবার জন্য আকুপাকু করতে লাগলো। সবশেষে Order Now লেখায় ক্লিক করেই বসলেন৷ যাকে কপি রাইটিংয়ের ভাষায় বলে Action!
মোটকথা এই ফর্মুলা কিন্তু কাস্টমার খ্যাপানো + সেল নিশ্চিতকরণের কপিরাইটিং ফর্মুলা। যা ইউজ করতে পারলে সেল নিশ্চিত।
PAS ফর্মুলা
দুই নাম্বার কপিরাইটিং ফর্মুলা হলো PAS ফর্মুলা। সমস্যার বুকে চাপ দিয়ে সেল নিশ্চিত করাই হলো এই ফর্মুলার উদ্দেশ্য। যা কাজ করে ঠিক এভাবে:
Problem → Agitation → Solution
উদাহরণ দিই! ধরুন পোস্টে লেখা আছে, আপনার পা অফিস থেকে ফিরে ফোলা থাকে? যেখানে বেসিক্যালি আপনার Problem তুলে ধরা হয়েছে। এরপর লেখা ছিলো, পায়ের এই ফোলা কিন্তু হার্টের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে! যা দিয়ে Agitation বোঝানো হয়েছে। আর সবশেষে পোস্টে Solution হিসাবে বলা হয়েছে, প্রতিদিন মাত্র ২০ মিনিট Foot Rest Pillow ব্যবহার করুন। দেখবেন পায়ের ফোলা ৭ দিনে কমে যাবে।
ঠিক এভাবেই কপিরাইটার কাস্টমারকে ভাবতে বাধ্য করে। আর আমরা সবাই জানি ভাবা মানেই ক্লিক, ক্লিক মানেই সেল!
FAB ফর্মুলা
৫ কপিরাইটিং ফর্মুলার মাঝে কপিরাইটারদের জন্যে সবচেয়ে ইজি ফর্মুলা হলো এই FAB ফর্মুলা। যেটা কাজ করে ঠিক এই ভাবে:
Feature, Advantage, Benefit
ব্যাসিক্যালি আমরা সবাই জানি কাস্টমার ফিচার শুনে পকেট থেকে টাকা বের করে না। এক্ষেত্রে তাকে বোঝাতে হবে লাভটা ঠিক এভাবে:
এই ব্যাক পিলোতে রয়েছে হাই-ডেনসিটি ফোম। যা দ্বারা বোঝানো হবে প্রোডাক্টের ফিচার। এরপর Advantage হিসাবে লেখা যায়, আর এই ফোম শরীরের শেপ অনুযায়ী নিজেকে অ্যাডজাস্ট করে। সবশেষে কাস্টমারকে কিনতে বাধ্য করার অংশ হিসাবে বলা যায়, পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি, কাজের সময় আরাম এবং রাতে ভালো ঘুম পেতে আজই কিনুন এই বেস্ট পিলো। Benefit হিসাবে এই লাইন কাজ করবে।
এক্সপার্টদের মতে লাভের গল্প বলার টেকনিক হলো এই FAB ফর্মুলা। সুতরাং প্রোডাক্ট ভালো হলেই ইউজ করুন এই FAB ফর্মুলা এবং লুফে নিন প্রচুর সেল!
4P ফর্মুলা
আমরা জানি মানুষ প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করে না। যেকোনো প্রোডাক্ট কেনার ক্ষেত্রেই একই সিস্টেম কাজ করে। এক্ষেত্রে দরকার 4P ফর্মুলা। এই কপিরাইটিং ফর্মুলাটি ঠিক এভাবে কাজ করে:
Promise, Picture, Proof, Push
যেমন ধরুন আপনি একটি কপি দেখলেন যেখানে লেখা আছে, এই পিলো ব্যবহার করে দেখবেন ৭ দিনে আপনার পিঠের ব্যথা কমে যাবে! এভাবে একটি Promise এর মাধ্যমে কপি শুরু করে Picture হিসাবে দেবেন ব্যাক পিলো ব্যবহারের লাইভ ছবি। এরপর দরকার Proof। যার অংশ হিসাবে দিতে পারেন, ২,৫০০+ কাস্টমারের ফিডব্যাক দেখুন। সবারই পিঠের ব্যথা কমেছে খুব দ্রুত সময়ে। সবশেষে আপনাকে কাস্টমারদের Push করতে হবে। এক্ষেত্রে লিখতে পারেন, আমাদের কিন্তু স্টক শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই এখনই অর্ডার দিন!
মনে রাখবেন এই কপিরাইটিং ফর্মুলায় থাকা ৪টি P মানেই কাস্টমারদের মানসিকভাবে হ্যাঁ বলানোর ফুল প্যাকেজ! যে ব্যবহার করতে পারলেই আপনার স্টক শেষ হতে সময় লাগবে না।
BAB
৫ কপিরাইটিং ফর্মুলার অংশ হিসাবে আমরা সবশেষে যে ফর্মুলা নিয়ে কথা বলবো সে ফর্মুলাটি হলো BAB বা:
Before — After — Bridge ফর্মুলা
সবচেয়ে সিম্পল কিন্তু সবচেয়ে কার্যকর এই ফর্মুলাটি কাজ করে ঠিক এভাবে:
Before হিসাবে কোনো একটি কপিতে থাকতে পারে, অফিস থেকে ফিরে আপনার শরীরের ব্যথা নিত্যদিনের সঙ্গী? এরপর After হিসাবে এড করা যেতে পারে, মাত্র ৭ দিনের মধ্যে নিশ্চিত করুন ব্যথামুক্ত কাজের জীবন! সবশেষে Bridge হিসাবে থাকবে, আমাদের এই ব্যাক পিলো আপনাকে সেই আরাম দিতে পারে যা আপনার অফিস চেয়ার আপনাকে দিতে পারছে না।
ব্যাস! এই ফর্মুলায় কাস্টমার নিজেকে আগে-পরের ছবিতে ইমাজিন করে নেবে। আর আমরা সবাই জানি ভাবা মানেই কাজ শেষ!
কেনো এই ৫ কপিরাইটিং ফর্মুলা সেল তৈরিতে কাজে দেয়?
কারণ মানুষ প্রোডাক্ট কেনার সময় যুক্তি খোঁজে (Logic), বাস্তব প্রমাণ চায় (Proof), কল্পনা করতে পছন্দ করে (Picture), সিদ্ধান্ত নিতে সময় নেয়। আর এই সময়টাতে Push দিয়ে তাড়া দিলে হয়তো প্রোডাক্ট কিনে ফেলে! আর আপনি যদি আপনার কপিতে এসব বিষয় নিশ্চিত করেন তবে দেখবেন সেল ধুমসে বাড়ছে।
ইতি কথা
যাদের সেলসে সমস্যা, আশা করি তারা এই ৫ কপিরাইটিং ফর্মুলা ইউজ করে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। মনে রাখবেন, যেকোনো সেলস প্রজেক্টে কনভার্সন বাড়ানোর ৭৫% ক্রেডিট শুধু ভালো কপিরাইটিংয়ের। এক্ষেত্রে ডিজাইন, কালার, প্রোডাক্ট সব বাদ! তাই আপনার কনটেন্টে ফর্মুলা = কাস্টমার + বিশ্বাস + সেল হিসাবে নিন৷ হ্যাপি আর্নিং!
লেখা: সুলতানা আফিয়া তাসনিম