কপিরাইটিং কাকে বলে: কপিরাইটিং শিখে কিভাবে ইনকাম করবেন
আপনি কি জানেন? এই লেখাটা পড়ার আগেই আমি আপনার মাইন্ড পড়ে ফেলেছি? বিশ্বাস হচ্ছে না? না হবারই কথা!
কারণ কপিরাইটিংয়ের আসল জাদু এটাই! কপিরাইটিং মানে শুধু সুন্দর সুন্দর শব্দ সাজিয়ে মস্তবড় প্যারাগ্রাফ তৈরি নয়! এটা এমন এক আর্ট যার সাহায্যে আপনি অডিয়েন্সের এটেনশন ধরে রাখতে পারবেন।
কপিরাইটিং শিখে কিভাবে ইনকাম করবেন, কত টাকা ইনকাম করতে পারবেন, কি কি শিখতে হবে সবকিছু নিয়েই আমরা আজ কথা বলবো। বিস্তারিত জানতে সাথেই থাকুন।
কপিরাইটিং কাকে বলে?
প্যাঁচালো ইংরেজি ছাড়াই চলুন সহজ বাংলায় বুঝিয়ে দিই কপিরাইটিং কাকে বলে।
যখন কোনো লেখা শুধু পড়ার জন্য নয় বরং কিছু করানোর জন্য লেখা হয়, তখনই সেটা হয় কপিরাইটিং।
মানে আপনি যখন কোনো প্রোডাক্ট কেনার জন্য বিজ্ঞাপন দেখেন, যেখানে লেখা থাকে:
৫০% ছাড়! আজই কিনুন!
তখন আপনি কি মনে করেন?
এই লাইনটা পড়ে আপনার কেন যেন মনে হয়, আর দেরি করা যাবে না! এই অফার মিস করা যাবে না!
আপনার এই ভাবনার পেছনের কারিগর হচ্ছে এই কপিরাইটিং বা কপিরাইটার।
মোটকথা, কপিরাইটিং মানে শুধু লিখা নয়। বরং লেখার মাধ্যমে সেলস আনা, ক্লিক আনা, লিড আনা। কারণ সাধারণ লেখা মানুষ পড়ে ভুলে যায়। আর কপিরাইটিং পড়ে মানুষ অ্যাকশন নেয়। যেখানে ছোট্ট একটা লাইনের শক্তিতে আপনি আপনার ক্লায়েন্টকে হাজার হাজার টাকা ইনকামের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারবেন।
কন্টেন্ট রাইটিং VS কপিরাইটিং কোনটি আপনার জন্য?
এবার আসি কন্টেন্ট VS কপিরাইটিং কোনটি আপনার জন্য পার্ফেক্ট হবে সে ব্যাপারে। আপনি যদি গল্প, ইনফরমেশন, ব্লগ, আর্টিকেল এসব জিনিসপাতি ভালো লিখতে পারেন তবে কন্টেন্ট রাইটিং আপনার জন্য। আর প্রোডাক্ট বিক্রি, ক্লায়েন্ট কনভার্ট, ইমোশনাল একশন এসবে যদি আপনার অনেক বেশি ঝোঁক থাকে তবে আপনি কপিরাইটিং ট্রাই করতে পারেন।
সোজা কথায়, কন্টেন্ট রাইটিং হচ্ছে শেখানোর জন্য। আর কপিরাইটিং হচ্ছে সেলসের জন্য!
প্রতিটি ব্র্যান্ড বা বিজনেস কেন কপিরাইটারের পেছনে টাকা ঢালে?
কারণ ব্র্যান্ডের ফেইস তার ওয়ার্ড। যত সুন্দর প্রোডাক্টই হোক না কেন, সঠিক শব্দ না হলে কেউ কিনবে না। আর একজন কপিরাইটারের কাজ হলো সেই শব্দ দিয়ে অডিয়েন্সের মনে বিশ্বাস তৈরি করা। আর বিশ্বাস তৈরি হলে সেলস এমনিতেই আসবে।
কপিরাইটিং এর কাজ কী?
সোজা বাংলায় এই প্রসেস মানে লেখার মধ্যেই আয়! আপনার লেখা দিয়ে কারো পকেট থেকে টাকা বের করানোর আইনি উপায়ের নামই কপিরাইটিং। শুধু ইনফর্ম নয়, অ্যাকশন করিয়ে প্রোডাক্ট সেল করাতে পারলেই কপিরাইটিংয়ের স্বার্থকতা! এই কপিরাইটিং করে ইনকাম করার প্ল্যাটফর্ম হলো ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ইউটিউব আর ই-কমার্স।
কোথায় কোথায় কপিরাইটিং এর কাজ পাওয়া যাবে?
এবার আসি কোথায় কোথায় কপিরাইটিং এর কাজ পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে।
শুরুতেই বলি আজকাল কপিরাইটিং ছাড়া ডিজিটাল দুনিয়া একেবারে অচল। তাই Facebook, Instagram, YouTube সবখানেই দরকার কপিরাইটিং। যার সাহায্যে তৈরি করা যাবে ভালো মানের স্ক্রিপ্ট, ই-কমার্স প্রোডাক্ট ডিসক্রিপশন, ব্র্যান্ড মার্কেটিং এবং অ্যাডভার্টাইজিং। আর এই ধরণের কাজ সেল করতে রাইটারেরা মূলত Freelance Marketplace ব্যবহার করে থাকেন৷ এক্ষেত্রে Upwork, Fiverr, PeoplePerHour কিন্তু ভালোই কাজ করে!
কপিরাইটিং শিখে কিভাবে ইনকাম করবেন?
মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে তো জানলেন। এবার চলুন কপিরাইটিং শিখে কিভাবে ইনকাম করবেন তার একটি ছোট্টো এবং ইজি রোডম্যাপ দেখে নিই।
১. মনে রাখবেন, Freelancing প্ল্যাটফর্ম যেমন Upwork, Fiverr এ হাজারো ক্লায়েন্ট আপনার অপেক্ষায়! তাই সময় নষ্ট না করে হাই কোয়ালিটি প্রোফাইলে ফোকাস দিন। এরপর আপনার কাজের প্রমাণ হিসাবে সেখানে এড করে দিন ২-৩ টা স্মার্ট স্যাম্পল আর কপিরাইটিং স্কিল! ব্যাস! দেখবেন ইনকাম শুরু হতে খুব একটা সময় লাগছে না।
২. এরপর ফোকাস করতে পারেন Local Agency তে। নিজের ব্র্যান্ডকে সবার সাথে পরিচিত করাতে এখন তো কপিরাইটারের চাহিদা আকাশ ছোঁয়া। যার কারণে লোকাল এজেন্সিতে এপ্লাই করে পার্ট-টাইম বা ফুল-টাইম সিস্টেমে চাকরি করে মাসে ২০,০০০-৫০,০০০ টাকা ইনকাম করা কোনো ব্যাপারই না। আপনিও ট্রাই করতে পারেন।
৩. এই রোডম্যাপও আপনার পছন্দ না হলে আপনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পেজ খুলে সেখানেই কপিরাইটিং সার্ভিস সেল করতে পারেন৷ নিজের পেজে কপিরাইটিং স্কিল দেখিয়ে ক্লায়েন্ট পেতে কিছুটা সময় লাগলেও ধৈর্য্য ধরতে পারলে এ কাজ যথেষ্ট সহজ মনে হবে।
৪. সবশেষে বলবো কপিরাইটার হিসাবে Remote Copywriter হয়ে কাজ করার কথা। কারণ এই ফিল্ডে বিদেশি কোম্পানির সাথে চুক্তিতে মাসে ৩০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকা আয় করা মোটেও কোনো গাল-গল্প নয়।
কপিরাইটিং শিখে মাসে কতটাকা ইনকাম করা যায়?
ব্যাসিকেলি কপিরাইটিং শিখে মাসে ইনকামের সীমা নেই। আপনার স্কিল যত বাড়বে, ইনকামও তত বাড়বে। শুরুর দিকে হয়তো ১০০ ডলার পাবেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তা ৫০০-১০০০ ডলার হয়ে যেতে পারে, যদি আপনার স্কিল ডেভলপ হয়। তবে হ্যাঁ! Local Agency ও Remote Contract ধরলে ইনকাম হবে স্টেবল।
কপিরাইটার হতে কি কি লাগবে?
এককথায় বিক্রি করার মতো শব্দচয়ন! মানুষের মনের প্রোবলেম বুঝে সলিউশন দিতে পারলে এবং সেই স্যলুশনে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রমোট করতে পারলেই কপি রাইটার হওয়া যাবে৷ Creative Thinking + SEO Writing Combo থাকলে তো কথাই নেই। সেই সাথে English & Bengali দুই ভাষাতেই দক্ষতা থাকা চাই।
কপিরাইটিং শেখার সহজ উপায়
যারা কপিরাইটিং শেখার সহজ উপায় খুঁজছেন তারা YouTube এ প্রচুর ফ্রি কপিরাইটিং টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন। সেগুলি ট্রাই করতে পারেন। আর ঘরে বসে ভালো মানের Paid Courses করতে চাইলে আছে Skillshare, Udemy, Copywriting Secrets।
ইতি কথা
মনে রাখবেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে, Word is Power। চাকরি হোক বা ফ্রিল্যান্স লেখালেখিতে ভালো হলেই বেছে নিন কপি রাইটিং সেক্টর। কারণ কপিরাইটিং ছাড়া আধুনিক মার্কেটিং অসম্ভব।
লেখা: সুলতানা আফিয়া তাসনিম